Course Content
১। শিশুকাল হতেই পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির বীর যোদ্ধা ও সামরিক বাহিনীর সাফল্যের উপর উপর লেখা আবেগপূর্ণ গল্পগুলো তাকে বলুন। বিখ্যাত মানুষদের সফলতার পেছনে যেসব শ্রম ও অধ্যবসায় জড়িত ছিল সেসবের গল্প বলুন। পরিশ্রম আর বীরত্বের গল্পগুলো তাকে পড়তে ও সে সম্পর্কে জানতে উৎসাহ দিন। পরিবারের সকলেই এমন সব বিষয় নিয়ে শিশুটির সম্মুখে আলোচনা করুণ যেন অবচেতনায় বীরত্বের প্রতি শিশুটির অন্তরে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এডভেঞ্চার বিষয়ক গল্প, অজানাকে জানার গল্প, শিকার কাহিনী, মহান যোদ্ধাদের জীবনী, দেশপ্রেমের গল্পগুলো শিশুদের অন্তরে স্বপ্নের বীজ বুনে, তাই নিজ গৃহে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুণ যেন শিশুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার মননশক্তি নিয়ে বড় হয়। একটা শিশু তার মা বাবাকেই সবথেকে বেশি ভালোবাসে আর তাই মা বাবার আনন্দ শিশুর জন্য সবথেকে শক্তিশালী অনুপ্রেরণা হিসেবে ক্রিয়াশীল হয়। মা বাবা হিসেবে শিশুটিকে তাই সমাজ জীবনে ন্যায় প্রতিষ্ঠার বীর যোদ্ধা হতে অনুপ্রাণিত করুণ।
Action Step: আপনার শিশুর বয়স ৭ বছর বা ততোধিক হলে তাদেরকে ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখিত মহান যোদ্ধাদের গল্পগুলোর মধ্যে হযরত ওমর বিন খাত্তাব, হযরত আলি ইবনে আবু তালিব, খালিদ বিন ওয়ালিদ, একাদশ শতকের মুসলিম সেনাপতি সালাউদ্দিন আইয়ুবি, মাম্লুক সুলতান বাইবারস, ফাতেহ মেহমেদ, ওমর মুক্তার প্রমুখ যোদ্ধাগনের জীবনী পড়তে ও জানতে উৎসাহিত করুণ।আপনার সন্তানের বয়স যদি ১২ বছরের ঊর্ধ্বে হয় তবে তাদেরকে সাথে নিয়ে বিনোদনের অংশ হিসেবে মনো-গঠনমূলক মুভি কিংবা ডকুমেন্টরি দেখুন। এক্ষেত্রে The lion of Desert, An apple from the Heaven, Bridge on the River Kawia,Children of Heaven, Color of Paradise, Dipu No-2, Tomorrow, The Karate Kid, মুভিগুলো উপকারী হতে পারে। অভিভাবক হিসেবে আমাদের একথাও মনে রাখা দরকার যে, ভাল গল্পগুলো যেমন শিশুদের অন্তরকে গঠন করে তেমনি খারাপ গল্প, মন্দ কথা কিংবা ঐরূপ কবিতা, গান বা কাহিনীগুলো তাদের অন্তরে বিষের মতই ক্রিয়া করে, তাই মন্দ গল্প, ছবি বা ভিডিও দৃশ্য হতে তাদেরকে রক্ষা করার কৌশল গ্রহণে সচেতন থাকুন।
0/2
২। যা কিছুই হোক শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার ও সদাচার করুণ। ছোট ছোট ভুল থেকে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা যেন নিজেকে সংশোধন করতে পারে সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করুণ। আত্মনির্ভরশীল করতে শিশুদের নিজেদের ছোট ছোট কাজগুলো যেন তারা নিজেরাই সম্পন্ন করে সে অভ্যাসে তাদের অভ্যস্ত করুণ। যে কাজ তারা নিজেই করার সামর্থ্য অর্জন করেছে তা অন্য কেও সম্পন্ন করে দেওয়া হতে বিরত থেকে শিশুদের আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করুণ।
Action Step: অভিজ্ঞতা না থাকায় শিশুরা অনেক কিছুতেই ভুল করে এবং শিশুরা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক তাই শিশুদের ভুল নিয়ে বিরক্ত হবেন না। শিশুর বয়স যদি ৭ বছর বা ততোধিক হয় তবে তাকে নিজের খাবার প্লেট নিজেই ধুয়ে রাখা, নিজের জুতা পরিষ্কার করা, ব্যবহার্য কাপড় ও বিছানাপত্র গুছিয়ে রাখা, অতিথিকে আপ্যায়ন করার মত কাজগুলো করানোর অভ্যাসে অভ্যস্ত করুণ। তাদেরকে পারিবারিক কিছু কিছু কাজে নিযুক্ত করুণ যেন তারা দায়িত্ব গ্রহণ করতে সাহসী হতে পারে।
0/1
৩। দিনরাত পড়ালেখা না করলে পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করবে না – এমন ভয় হতে বেড়িয়ে এসে বরং তাকে মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন।মুখস্ত করার বদলে তাকে শেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। বাবা মা হিসেবে সন্তানের সাথে আন্তরিক সময় ব্যয় করুণ; তাদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাদের সাথে গল্প করুণ। বাসার সকলকে নিয়ে একসাথে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুণ।
Action Step: শিশুর পড়ালেখার জন্য নিরিবিলি পরিবেশ গঠন করুণ। হৈচৈ শব্দ,অযাচিত কোন গন্ধ,কোলাহল, ইত্যাদি থেকে শিশুর পড়ালেখার পরিবেশকে রক্ষা করুণ। অভিভাবক হিসেবে নিজ গৃহের পরিবেশকে এমনভাবে সংরক্ষণ করুণ যেন শিশুটি পড়ার সময়ে পড়ালেখা ব্যতীত অন্য কিছুর প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করে। পড়ালেখা শেষ হলে তাদেরকে নিয়ে একসাথে খেলাধুলা কিংবা খাবার খাওয়া অথবা গল্প করার মধ্য দিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করুণ। গৃহ প্রত্যেকের কাছে পবিত্র বাসস্থান তাই নিজ গৃহকে হৈ চৈ কিংবা গান-বাজনার স্থান বানানোর পরিবর্তে শান্ত পরিবেশ সুরক্ষার অভ্যাস আপনার শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্টের জন্য অধিক উপকারী।
0/1
৪। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম আমাদের মস্তিস্কের হিপোক্যাম্পাসের কার্যক্রমকে অধিক সক্রিয় করে নিওরজেনেসিস ঘটায় ফলে নতুন নতুন নিউরনের জন্ম হয় তাই,আপনার শিশুটিকে আউটডোর খেলাধুলায় আগ্রহী করুণ। প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘণ্টা এমন খেলাধুলায় অভ্যস্ত করুণ যেন তার শারীরিক গঠনের সাথে মস্তিষ্কের গঠনও সুঠাম হতে পারে। সুষম খাবার আর রাত ১০ টার মাঝেই ঘুমের অভ্যাস আপনার সন্তানের শারীরিক যোগ্যতাকে বিশেষভাবে বৃদ্ধি করবে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে অধিক শক্তিশালী করবে।
Action Step: শিশুটিকে প্রতিদিন ফুটবল, ক্রিকেট, বা অন্য যে কোন আউটডোর খেলাধুলা কিংবা স্পোর্টসে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ করে দিন। প্রয়োজনে তাদের সাথে নিজেও সেসব খেলাধুলায় অংশ নিন। শিশুরা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ ইনভেস্টমেন্ট তাই শিশুদের সাথে সময় দেওয়াকে অন্য যে কোন কাজের বিপরীতে অগ্রাধিকার দিন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ও গভীর ঘুমের মাঝে আমাদের শরীর পেশি গঠন, সৃতিশক্তি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ও সকল প্রকার ক্ষয়পূরণ বা মেরামতের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে থাকে। গভীর ঘুমের মাঝেই কেবল আমাদের শরীর হতে ক্ষতিকর দূষিত ও টক্সিক কেমিক্যালগুলোর অপসারণ চলে তাই শিশুটিকে ৭ হতে ৮ ঘণ্টার গভীর ঘুমের অভ্যাসের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করুণ। শিশুদের সাহায্য করতে নিজেরাও রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস করুণ।
0/1
৫। শিশুদের সামনে ভয়, সংশয়,অসম্মান, অমর্যাদা বিষয়ক কথা, কাহিনী, ও আলোচনা হতে বিরত থাকুন।
Action Step: ভুতের গল্প, হরর কাহিনী, বীভৎস কোন বর্ণনা বা দৃশ্য হতে শিশুদের রক্ষা করুণ। শিশুদের সামনে বড়দের কোন ভুল নিয়ে সমালোচনা করবেন না। বাসায় কোন গৃহপরিচারিকা থাকলে তাদেরকেও সম্মান করার অভ্যাসে অভ্যস্ত করুণ আপনার সন্তানকে। আপনার সন্তানকে ছোটবেলাতেই সাঁতার শিখিয়ে দিন যেন পানি ভীতি হতে সে মুক্ত থাকে।
0/1
৬। আপনার সন্তান যেন অন্য সকলের প্রিয়পাত্র হতে পারে সে লক্ষ্যে শিশুটিকে ভাল আচার আচরণের শিক্ষা দিন। সে যেন ছোটবেলা থেকেই বন্ধুদের অনুপ্রাণিত করার সক্ষমতা আয়ত্ত করতে পারে সে বিষয়ে তাকে আগ্রহী করে তুলুন।
Action Step: বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক গঠন ও সেসব সম্পর্ক রক্ষা করার গুরুত্ব নিয়ে আপনার সন্তানের সাথে খোলামেলা আলোচনা করুণ। কারা তার বন্ধু, সেসব বন্ধুদের কি কি গুনাগুণ রয়েছে এবং তারা কি পছন্দ বা অপছন্দ করে সেসব নিয়ে কথা বলুন। কারও সাথে মতবিরোধ হলে তা কিভাবে মিটিয়ে ফেলতে হয় কিংবা কিভাবে অন্যদের অনুপ্রাণিত রেখেও নিজের মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সে সব কৌশল নিয়ে গল্প করুণ।মানুষের জীবনে সম্পর্কগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুটিকে অন্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করার বিষয়ে অভ্যস্ত করুণ।
0/1
৭। যে কোন বিষয়ে গুছিয়ে কথা বলার অভ্যাস করা অত্যন্ত মূল্যবান মানুষিক সক্ষমতা তাই শিশুকে নিজ গৃহেই অন্য সকলের সামনে নানা বিষয়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দিন। মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনুন এবং আরও প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়ভাবে কথা বলতে তাকে আগ্রহী করে তুলুন।
Action Step: শিশুটিকে কোন একটা গল্প বলার সুযোগ দিন। সকলেই আগ্রহী শ্রোতা হয়ে তার কথা শুনুন এবং গল্প শেষ হলে কিছু কিছু প্রশ্ন করে গল্পের যৌক্তিকতা উপস্থাপনে তাকে আগ্রহী করুণ। ভাল গল্প বলার জন্য তাকে পুরস্কার দিন। পরের দিনের গল্পের বিষয় আগেই তাকে জানিয়ে দিন যেন সে কিছুটা প্রস্তুতি নিতে পারে।
0/1
৮। আপনার সন্তানকে আত্মসম্মানী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করুণ। ভোগবিলাস শিশুদের জীবন-স্বপ্নকে দুর্বল করে দেয়, তাই সন্তানকে সুষ্ঠু মানুষিক গঠন নিয়ে গড়ে উঠতে তাদের মৌলিক প্রয়োজনগুলোকে গুরুত্ব দিন কিন্তু বিলাসী কোন কিছু পেতে তাদেরকে নিজের উপার্জন অবধি অপেক্ষা করার আত্মসম্মানের শক্তিতে শক্তিশালী করুণ।
Action Step: শিশুদের সম্মান রক্ষা করুণ, কোন কারণেই তাদের মর্যাদার অবমূল্যায়ন করবেন না। ভালো কাজের প্রশংসা করুণ আর মন্দ কাজগুলো যে তাদের আত্মমর্যাদার জন্য ক্ষতিকর তা বুঝিয়ে বলুন। তাদের কোন ভুল বা লজ্জার বিষয়গুলোকে অন্যদের সামনে প্রকাশ করবেন না। ফলাফল যা কিছুই হোক তাদের যেকোন পরিশ্রম ও প্রচেষ্টাকে উৎসাহ দিন। ফাঁকা প্রশংসা শিশুদের মাঝে ভ্রান্ত আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারে তাই যেকোন কাজে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টাকেই মূল্যায়ন করুণ।
0/1
৯। তাকে ছোট ছোট গঠনমূলক কিছু কাজ স্বাধীনভাবে করতে দিন। শিশুটি যেন আত্মবিশ্বাসী হতে পারে তাই বাস্তব কিছু অর্জন করতে সক্ষম এমন মানুষিক শক্তি অর্জনে তাকে অনুপ্রাণিত করুণ।
Action Step: শিশুর পড়ার টেবিলে স্বচ্ছ একটা জার রাখুন আর তার প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোকে একটা রঙ্গিন কাগজে লিখে জারের মধ্যে জমা করতে উৎসাহিত করুণ। এভাবে ধীরে ধীরে তার অর্জনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং শিশুটি আরও ভাল কিছু অর্জন করার জন্য মননশক্তি অর্জন করবে।
0/1
ক্যারিয়ার কোর্স 001
Join the conversation